Pratibader Kantho » যে নেতার অপেক্ষায় দেশের মানুষ

যে নেতার অপেক্ষায় দেশের মানুষ


নিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন
যে নেতার অপেক্ষায় দেশের মানুষ

রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্রের লড়াইয়ের মাস্টারমাইন্ড এই নেতার অপেক্ষায় দলমতনির্বিশেষে ১৮ কোটি মানুষ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে দেশে ফিরছেন তিনি। আগামী নির্বাচনে গণতন্ত্রবিরোধী সাম্প্রদায়িকতাবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশের গণতন্ত্রকামী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় নিশ্চিত করার ভোটযুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির এই শীর্ষনেতা। তারেক রহমান আগামী নির্বাচনে বিএনপির ৩১ দফার পক্ষে গণরায় প্রদানের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাবেন। কেন নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতাবাদী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, সে বিষয়ে জনমত গড়ে তুলবেন তিনি। এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে উদ্বুদ্ধ করবেন তারেক রহমান।

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিজয় অর্জিত হয়েছে ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে। মুক্তিযুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতাবাদী শক্তি দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। নিজেদের মা-বোনকে তারা তুলে দিয়েছে দখলদার বাহিনীর কাছে। নির্বাচনে একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসরদের জয় নিশ্চিত হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। যে কারণে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে গুরুত্বের চোখে দেখছে দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই জেগে উঠবে। তাঁকে অভ্যর্থনার জন্য সারা দেশ থেকে রাজধানীতে জড়ো হবে অন্তত ৫০ লাখ মানুষ। ইতোমধ্যে সে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রবাসীদের মধ্যেও পড়েছে অবিশ্বাস্য সাড়া। এ উপলক্ষে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে আসছেন কয়েক হাজার প্রবাসী। তাঁরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময়টির সাক্ষী হতে চান।

ওয়ান-ইলেভেনের অবৈধ শাসকদের শাসনামলে আটক করা হয় তারেক রহমানকে। তাঁর ওপর পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে যুক্তরাজ্যে যেতে বাধ্য করা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের অবৈধ শাসকদের সঙ্গে যোগসাজশে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার সরকার। ওয়ান-ইলেভেন আমলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহারের বদলে তাঁকে আরও বেশি মামলায় জড়ানো হয়। এমনকি ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পরও তিনি যাতে দেশে ফিরে না আসতে পারেন সেজন্য ষড়যন্ত্র চলে। সংগত কারণেই জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বিজয়ের পরও দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে তারেক রহমানকে প্রবাসে অবস্থান করতে হয়।

দেশনেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার বিষয়ে দেশবাসীর রায় কামনা করবে। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্য নিয়ে ৩১ দফায় দুর্নীতির ক্ষেত্রে ‘কোনো আপস না’ করার নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। গত দেড় দশকে দেশে যত বড় দুর্নীতি ও অর্থ পাচার হয়েছে, তার বিস্তারিত তুলে ধরে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিদ্যমান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও দুর্নীতি দমন আইনের সংস্কারের মাধ্যমে সংস্থাটির BP 102স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো হবে।

সংবিধান অনুসারে দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়ন থাকা ন্যায়পাল পদটি অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা করারও অঙ্গীকার রয়েছে ৩১ দফায়। এসব উদ্যোগের লক্ষ্য হলো দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা ও সুশাসন নিশ্চিত করা। সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি রয়েছে বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফায়। বিরোধীদের দমনপীড়নে বহুল আলোচিত ঘটনাবলি সামনে রেখে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন ইত্যাদির অবসান ঘটানো হবে।

মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে মানবাধিকার কমিশন পুনর্গঠন করা হবে। গত দেড় দশকে সংঘটিত সব গুম, ক্রসফায়ারের নামে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্মম অত্যাচারের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোতে জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেবে বিএনপি।

দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হয়েছিল বিএনপি আমলে। মুক্তবাজার অর্থনীতির অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্য দূর করতে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবে। যাতে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার ও করপোরেট নেতারা থাকবেন। লক্ষ্য হবে অর্থনৈতিক নীতি সংস্কার ও সাম্য নিশ্চিত করা। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আলোকে অর্থনীতির সুফল ধনী-গরিব সবার মাঝে সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, সাংবিধানিক, প্রশাসনিক, জুডিশিয়াল, মিডিয়া ও অর্থনৈতিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে যাতে সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় বলে রূপরেখায় উল্লেখ আছে। ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক নাগরিকের নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ বিএনপি। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংবিধান স্বীকৃত সব অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিগত সময়ে সংখ্যালঘুদের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা কিংবা সম্পত্তি দখলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি। পাহাড়ি ও সমতলের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার কথাও উল্লেখ আছে ৩১ দফায়।

শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রম পরিবেশ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে দেশনেতা তারেক রহমানের রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, শিশুশ্রম বন্ধ এবং শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। গত সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল, চিনিকল, টেক্সটাইল মিলসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সব কলকারখানা পর্যায়ক্রমে পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিদেশগামী ও প্রবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ বিএনপি। দেশের অনগ্রসর অঞ্চল যেমন চা-বাগান, বস্তি, চর, হাওড়-বাঁওড়, মঙ্গাপীড়িত উত্তরাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘদিনের সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণের কথাও উল্লেখ রয়েছে ৩১ দফায়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতে বিদ্যমান সব দায়মুক্তি আইন ও কালো আইন বাতিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (কুইক রেন্টাল) থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে যে ‘জনস্বার্থবিরোধী সীমাহীন দুর্নীতি’ চলছে তা বন্ধ করে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় রোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও স্থানীয় গ্যাস-খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর দেওয়া হবে।

পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে বিএনপির ৩১ দফায়। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সমস্যাবলি আন্তর্জাতিক বিধিবিধান, ন্যায়সংগত ও সমতা নীতি অনুযায়ী সমাধান করা হবে। বাংলাদেশের মাটি কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার হতে দেওয়া হবে না এবং দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী আইনগুলোর অপব্যবহার করে ভিন্নমত ও বিরোধী দল দমন করার যে অপতৎপরতা চলেছে তা বন্ধ করা হবে বলে বিএনপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হবে বলে তারা মনে করে।

স্বাধীনতা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিকীকরণ ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও পেশাদারির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সব রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা হবে এবং তাদের স্বকীয় মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখা হবে। বিএনপি ক্ষমতার গেলে রাষ্ট্রক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও স্বাধীন ও শক্তিশালী করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পরিষদসমূহের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সেবা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালনে সমর্থ করা হবে। এগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো নির্বাচিত স্থানীয় সরকার পরিষদের মেয়াদ থাকা অবস্থায় (মৃত্যু অথবা আদালতের রায় ব্যতীত) প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না এবং আদালতে দণ্ডিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না।

জাতীয় উন্নয়নে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণের অঙ্গীকার করা হয়েছে বিএনপির ৩১ দফায়। নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করার উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সংগত কারণেই রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার রূপকার তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ।

লেখক : বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং জাসাসের সভাপতি

মতামত বিভাগের আরো খবর

আরও খবর